মমতাদি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর -২০২৩
আরও পড়ুন :-
পল্লিসাহিত্য গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর - ২০২৩.
সৃজনশীল প্রশ্ন - ০১
বারাে বছরের মাতৃহীন মিনা বাবা সৃজনশীলকে সহযােগিতা করার জন্য একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। গৃহকত্রী তার ছােট মেয়েটিকে শেখালেন মিনাকে ‘মিনা ফুফু' বলে ডাকতে। গৃহকত্রীর স্নেহে মিনা যেন তার মা’কেই ফিরে পেল। মিনার বাবা একদিন তাকে নিতে এলে মিনা কান্না জড়ে দিল এবং বলল, এই বাড়ি ছাইড়া আমি কোনােখানে যামু না।
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসল নাম কী?
খ. ‘বেশি আস্কারা দিও না, জ্বালিয়ে মারবে।'— মা কাকে, কেন এ কথা বললেন?
গ. উদ্দীপকের মিনা মমতাদি' গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের গৃহকত্রী কি মমতাদি' গল্পের লেখকের মায়ের প্রতিনিধিত্ব করে? তােমার যৌক্তিক মতামত দাও।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ০১
ক.
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসল নাম প্রবােধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
খ.
- গল্পকথকের মা মমতাদিকে সতর্ক করে দিতে গিয়ে প্রশ্নোক্ত কথাটি বললেন।
- মমতাদি' গল্পে গল্পকথকের পরিবারের সবাই মমতাদিকে তাদের একজন হিসেবেই ভাবত। এই বিষয়টি বুঝতে পেরে মমতাদিও গল্পকথককে নিজের ছােট ভাইয়ের মতােই স্নেহ করেছে। গল্পকথকের মায়ের মতে গল্পকথক বেশি কথা বলে। সে ছিল চল প্রকতির সে মমতাদির আদর পাওয়ার লােভে তাকে নানা প্রশ্ন করত এবং ঘনিষ্ঠ হতে চাইত । তাই তার মা মমতাদিকে সতর্ক করে বলেছেন তাকে বেশি আশকারা না দিতে। বেশি আশকারা দিলে তাকে হয়তাে আরও বেশি জ্বালাতন করবে।
গ.
- উদ্দীপকের মিনা মমতাদি' গল্পের মমতাদি চরিত্রের প্রতিচ্ছবি।
- সমাজের সব মানুষের অবস্থান সমান হয় না। অনেক সময় মানুষকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কাজ করতে হয়, যা তার প্রত্যাশিত নয়। তাই মানুষের পরিস্থিতি না জেনে-বুঝে কোনাে মন্তব্য বা খারাপ আচরণ আমাদের করা উচিত নয়।
- উদ্দীপকে সময়ের প্রয়ােজনে বাবাকে সাহায্য করার জন্য মিনা কাজ নেয় অন্যের বাড়িতে। সেখানে সে সবার আপন হয়ে ওঠে। মিনা সেই বাড়ির গৃহকত্রীর মধ্যে নিজের মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। সে এতই আপন হয়ে ওঠে যে, ঐ বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চায় না । মমতাদি' গল্পে মমতাদির মধ্যেও একই বিষয় দেখতে পাওয়া যায়। মমতাদির ঘরে অভাব থাকায় সে গল্প কথকের বাড়িতে কাজ নেয়। প্রথম দিন থেকেই সে বাড়ির সবার আপন হয়ে ওঠে। গল্পকথককে সে নিজের ভাইয়ের মতাে দেখে। উদ্দীপকের মিনার। বৈশিষ্ট্য এবং মমতাদির বৈশিষ্ট্য একই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মিনা ‘মমতাদি' গল্পের মমতাদির চরিত্রের প্রতিচ্ছবি ।
ঘ.
- হ্যা, উদ্দীপকের গৃহকত্রী মমতাদি' গল্পের লেখকের মায়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
- মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকলে সমাজের শান্তি বিঘ্নিত হয়। সব স্তরের মানুষই প্রাপ্য সম্মান আশা করে । কে ধনী, কে গরিব, কে উচ, কে নিচ এই বৈষম্য সমাজে যতদিন থাকবে ততদিন মানুষে মানুষে সামাজিক বিশৃঙ্খলা থাকবে। যদি মানুষে মানুষে। ভেদাভেদহীন সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে, তাহলে পৃথিবীটাই স্বর্গ হয়ে উঠবে।
- উদ্দীপকের গৃহকত্রী মিনাকে কাজের মেয়ের মতাে করে ভাবেননি, আপন করে নিয়েছেন। মিনাও তার মাঝে মিনার হারানাে মাকে খুঁজে পেয়েছে। তাই মিনার বাবা মিনাকে নিতে এলে সে ঐ পরিবার ছেড়ে যেতে রাজি হয় না। যদি গৃহকত্রী মিনাকে ভালাে না বাসত তাহলে। সে ঐ বাড়িতে এত ঘনিষ্ঠভাবে থাকতে চাইত না। মমতাদি' গল্পের গল্পকথকের মা মমতাদির মুখ দেখেই বুঝতে পারেন যে, মমতাদি আসলে ভদ্র ঘরের মেয়ে, বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে এসেছে। মা তাই তাকে বাড়িতে কাজ দেন এবং তাকে আপন করে নেন। মমতাদির স্বামীর চাকরি হয়েছে শুনে তিনি অত্যন্ত মােলায়েমভাবে বলেছেন, মমতাদি চলে গেলেও তারা রাগ করবেন না। এমনকি তিনি নিজেও মমতাদিকে নিয়ে চিন্তা করতেন এবং নিজের ছেলের দুষ্টুমির অন্য ছেলেকে প্রশ্রয় দিতে নিষেধ করেন।
- উদ্দীপকের গৃহকত্রী মিনাকে আপন করে নিয়েছেন বলেই মিনা তার মধ্যে নিজের মাকে খুঁজে পেয়েছে। আর মমতাদি' গল্পের গল্পকথকের মা মমতাদিকে আপন করে নিয়েছেন বলেই তিনি মমতাদিকে নিয়ে চিন্তা করেছেন এবং কাজের লােক বলে নিজের ছেলেকেও তার কাছ থেকে দূরে রাখেননি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের গৃহকত্রী মমতাদি' গল্পের গল্পকথকের মায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। কারণ দুজনেই কাজের লােককে আপন করেন নিয়েছেন।
সৃজনশীল প্রশ্ন - ০২
বিলাসপুরের তাতদের সেরা সুবল তাতি। সুতাের অভাবে তাতিপাড়ার সমস্ত তাত বন্ধ । অভাব ও আতঙ্কে সমস্ত তাতিপাড়ায় থমথমে ভাব। সেখানে তাত চলছে শুধু কেশবের আর বৃন্দাবনের। অন্যরা সাধারণ কাপড় বুনতে চায় না বলে তাদের তাঁত চলছে না। এই ব্যাপারে সবচেয়ে একগুঁয়ে সুবল তাঁত। ভুবন ঘােষাল নানা লােভ দেখালেও শেষ পর্যন্ত সুবল সস্তা সুতাের সস্তা কাপড় বুনতে চায় না। কারণ সে ভুলতে পারে না তার তাতিবাড়ির ঐতিহ্য। নিজের আত্মসম্মান ত্যাগ করে লােভের বশবর্তী হয়ে সে সস্তা কাপড় বুনতে রাজি হয় না। পুল সা" আত্মসম্মানবােধ কখনাে দারিদ্রের কাছে পরাজিত হতে পারে না।
ক. মমতাদি জীবনময়ের গলিতে কত নম্বর বাড়িতে থাকতেন?
খ. “শ্রীহীনতার জন্য সযত্নে গুছিয়ে রাখা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে বিশৃঙ্খলার অন্ত নেই”- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি কোন দিক থেকে ‘মমতাদি' গল্পের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পেশাগত ভিন্নতা থাকলেও সুবল তাঁতি ও মমতাদি' গল্পের মমতাদি চরিত্রে আত্মসম্মানবােধ সর্বদাই সমুন্নত ছিল বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ০২
ক.
মমতাদি জীবনময়ের গলিতে সাতাশ নম্বর বাড়িতে থাকতেন।
খ.
- ‘শ্রীহীনতার জন্য সযত্নে গুছিয়ে রাখা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে বিশৃঙ্খলার অন্ত নেই”- কথাটি মমতাদির শােয়ার ঘরের পরিবেশ দেখে লেখক বলেছেন।
- মমতাদি' গল্পে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় গৃহকর্মে নিয়েজিত অভাবী মানুষের প্রতি মানবিক ও সহনশীল আচরণের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। স্বামীর চাকরি না থাকায় মমতাদি লেখকের বাড়িতে রাধুনির কাজ নেয়। স্কুলপড়ুয়া বালক লেখককে সে ছােট ভাইয়ের মতাে স্নেহ করে। একদিন স্কুল। করি না থাকায় মমতাদি লেখকের ব ই গেলে সেখানকার অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। থেকে বাড়ি ফেরার পথে লেখক মমতাদির ঘরে গেলে, সেখানকার অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। জীবনময়ের গলির সাতাশ নম্বর বাড়িতে গিয়ে বটিতে জানালা দিয়ে সামান্য আলাে মমতাদির শােয়ার ঘরের শ্রীহীন অবস্থা দেখে তিনি প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেন। কারণ মমতাদির সেই ঘরটিতে জানালা দিয়ে সামান্য আলাে এলেও বাতাস আসার সম্ভাবনা নেই। ঘরের জিনিসপত্র কমদামি, শ্রীহীন। সংসারের সমস্ত জিনিস সেখানে একটি ঘরে রাখা হয়েছে।
গ.
- উদ্দীপকটি অভাব ও আত্মসম্মানবােধের দিক থেকে 'মমতাদি' গল্পের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
- প্রত্যেকেরই আত্মমর্যাদাবােধ আছে। কেউ কেউ অভাবে পড়ে তা বিসর্জন দেয়। আবার কেউ তা যথাসম্ভব বজায় রেখে জীবননগর জন্য ছােটখাটো কাজে আত্মনিয়ােগ করে। মনের জোর থাকলে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে অনেকে হতদরিদ্র অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কারও কাছে নিজের মর্যাদাকে হেয় করতে হয় না ।
- উদ্দীপকে অভাবী মানুষের জীবনচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এখানে বিলাসপুরের তাঁতিদের তাঁত বন্ধ এবং তাদের অভাবের আor হয়েছে। অভাবী তাতিদের অন্যতম একজন সুবল তাতি। সে একগুয়ে স্বভাবের লােক, কিন্তু লােভী নয়। তাই অভাবে থাকল। ঘােষালের কথায় রাজি হয় না। সে সস্তা সুতােয় সস্তা কাপড় বুনে বদনামের ভাগী হতে চায় না। সে মনে করে তার আত্মসম্মানের। ক্ষতি হবে। এই বিষয়টি মিমতাদি গল্পের মমতাদির আত্মসম্মানবােধের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই গল্পে মমতাদি স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ায় গৃহপরিচারিকার কাজ নিলেও সেই বাড়িতে যেতে রাভি মাত্র নিলেও সেই বাড়িতে খেতে রাজি হয়নি। গৃহকত্রীর সঙ্গে প্রয়ােজন ছাড়া কথাও বলেনি। উদ্দীপকের সুবল তাতির মধ্যে এই ধরনের আত্মসম্মানবােধের প্রতিফলন ঘটেছে।
ঘ.
- পেশাগত ভিন্নতা থাকলেও সুবল তাঁতি ও মমতাদি' গল্পের মমতাদি চরিত্রে আত্মসম্মানবােধ সর্বদাই সমুন্নত ছিল- মন্তব্যটি যথার্থ।
- দারিদ্র্যের কারণে মানুষ অনেক সময় আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে জীবনধারণের জন্য হীন কাজ করতেও কুণ্ঠিত হয় না। আবার অনেকে আত্মসম্মান নিয়েই কষ্ট করে টিকে থাকতে চেষ্টা করে। তবে পারিপার্শ্বিকতা ও সামাজিক অবস্থার চাপে অনেক ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না।
- উদ্দীপকে বিলাসপুরের সেরা তাতি সুবলের কথা বলা হয়েছে। তাত বন্ধ হওয়ার পর সুবল অভাবে পড়ে। তখন ভুবন ঘােষাল তাকে। কম দামের সুতােয় কাপড় বুনতে লােভ দেখায়। কিন্তু সুবল নিজের সুনাম নষ্ট করতে চায় না। সে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে টাকার লােভে সস্তা কাপড় বুনতে রাজি হয় না। কারণ, দারিদ্র্যের কাছে সে আত্মসম্মানবােধ হারাতে চায় না। এই দিকটি মমতাদি' গপ্পের স্বামীর চাকরি না থাকায় অভাবে পড়েও মমতাদির আত্মসম্মান ধরে রাখার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সে অন্যের বাড়িতে। গৃহপরিচারিকার কাজ করতে মাইনে নিতে রাজি হলেও সেখানে খেতে রাজি হয়নি।
- মমতাদি' গল্পে লেখক তাভাবী মানুষের প্রতি মানবিক, সহনশীল আচরণ ও সহানুভূতির দিকটি তুলে ধরেছেন। গহকর্মে নিয়ােজিতরাও সে সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার যােগ্য তা দেখিয়েছেন। উদ্দীপকের সুবলের মধ্যেও সেই সম্মান ও মর্যদাবােধের বিষয়টি প্রতিফলিত, যা মমতাদি চরিত্রে দেখা যায়। এদিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।