মানুষ মুহাম্মদ (সঃ) গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর- ২০২৩
আরও পড়ুন :-
শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর - ২০২৩.
মানুষ মুহাম্মদ (সঃ) সৃজনশীল প্রশ্ন ০১
হযরত আবুবকর (রা.) হযরতের মহান বাণী শুনিয়ে শােকে মর্মাহত বিহ্বলিত মুসলমানদের বুঝিয়ে দিলেন তিনিও মানুষ, তিনিও মৃত্যুর অধীন।
ক. মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে স্থিতধী’ বলা হয়েছে কাকে?
খ. “কেহবা পাগলের মতাে কাণ্ড শুরু করে”- কেন?
গ. উদ্দীপকটি মানুষ মুহম্মদ (স.) প্রবন্ধটির কোন সময় ও দিক নির্দেশ করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ভাবার্থে মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধের মূলভাব প্রতিফলিত হয়নি। বিশ্লেষণ কর।
মানুষ মুহাম্মদ (সঃ) সৃজনশীল উত্তর ০১
ক.
মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে হযরত আবুবকর (রা.)-কে স্থিতধী’ বলা হয়েছে।
খ.
- “কেহবা পাগলের মতাে কাণ্ড শুরু করে”– হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মৃত্যুর কথা শুনে।
- হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মৃত্যু সংবাদ যখন মদিনায় ছড়িয়ে পড়ে তখন সমগ্র মদিনায় যেন অন্ধকার নেমে আসে। সবাই এক রকম নীরব ও নিস্তব্ধ হয়ে যায়। আবার কেউ পাগলের মতাে আচরণ করতে শুরু করে। প্রসঙ্গত হযরতের অসুস্থতার খবর শুনতে অনেক মানুষ একত্রে জমায়েত হয়েছিল। এমন সময় কেউ একজন তার মৃত্যুর খবর ঘােষণা করে। মূলত হযরতের মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার পর সমবেত জনতার মনে এক মর্মান্তিক শােকাবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় তার শােকে তাদের কেউ কেউ পাগলের মতাে হয়ে গিয়েছিল। একথা বােঝাতে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করা হয়েছে।
গ.
- উদ্দীপকটি মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মৃত্যু সংবাদ ও তৎপরবর্তী সময়কে নির্দেশ করেছে।
- মানুষ মরণশীল। ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, মহাপুরুষ, উত্তম-অধম সব মানুষকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। এ সত্য জানা সত্ত্বেও ক্ষমতাবান ও উচ্চাভিলাষী মানুষ অনেক সময় সৃষ্টির এই অমােঘ বিধানকে তাচ্ছিল্য করতে চায়।
- উদ্দীপকে দেখা যায়, হযরত আবুবকর (রা.) হযরতের মহান বাণী শুনিয়ে শােকে মর্মাহত ও বিহ্বল মুসলমানদের বুঝিয়েছিলেন তিনিও মানুষ, তিনিও মৃত্যুর অধীন। একইভাবে মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধেও হযরতের অসুস্থতার খবর শুনতে মদিনায় আসা জমায়েত লােকদেরকে শান্ত করেছিলেন। মহানবি (স.)-এর মৃত্যু হয়েছে। খবর শুনে হযরত ওমর (রা.) বলেন যে, যে বলবে হযরত মারা গেছেন তার মাথা যাবে। মৃত্যুর খবর শুনে সমবেত জনতাও অস্থির হয়ে ওঠে। তখন মদিনার সমবেত জনতাকে শান্ত করতে হযরত আবুবকর (রা.) বলেন, যারা হযরতের অনুসারী তারা জানুক তিনি মারা গেছেন। সেই সাথে তিনি আল্লাহর সুস্পষ্ট বাণীর কথা উল্লেখ করেন- মুহম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল ছাড়া আর কেউ নন, তার পূর্বে অনেক রাসুল মারা গেছেন। উদ্দীপকেও মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধের হযরতের মৃত্যু ও তার পরবর্তী সময়ের দিকটি নির্দেশ করা হয়েছে।
ঘ.
- উদ্দীপকের ভাবার্থে মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধের মূলভাব প্রতিফলিত হয়নি— উক্তিটি যথার্থ।
- মহৎ মানুষের শারীরিক মৃত্যু হলেও কাজের মধ্য দিয়ে তাঁরা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকেন। তাদের আদর্শ, চেতনা, মূল্যবােধ মানুষকে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা জোগায়, সত্যের পথে আহ্বান করে। এমনই একজন মহাপুরুষ ছিলেন মহানবি হযরত মুহম্মদ (স.)।
- “মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, হযরতের মৃত্যু সংবাদ মদিনায় প্রচারিত হলে মদিনায় সমবেত জনতা তা মানতে পারেনি। এমনকি হযরত ওমর (রা.) আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এমন সময় সমবেত জনতার উদ্দেশে হযরত আবুবকর (রা.) বলেন, যারা রাসুলের অনুসারী তারা জানুক হযরত মারা গেছেন। আল্লাহর বাণী উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, মুহম্মদ (স.)। একজন রাসূল্য মাত্র । এরকম রাসুল আগেও এসেছেন এবং মারা গেছেন। তিনি বলেন, মুহম্মদ (স.) চলে গেছেন কিন্তু তিনি। পৃথিবীতে যে সত্য রেখে গেছেন তা কি তােমরা মাথা পেতে নেবে না? এরপর ওমরসহ সমবেত জনতা শান্ত হয়। এ প্রবন্ধে লেখক মুহম্মদ (স.)-এর কর্মজীবন ও তার নানা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নানা দিক তুলে ধরেছেন। মুহম্মদ (স.) চরিত্রের ত্যাগ, তিতিক্ষা, ক্ষমা, ইসলাম প্রচারসহ আরও নানা দিক এ প্রবন্ধে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি অত্যাচারিত হয়ে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্ত মক্কা বিজয়ের পর সমগ্র কাফেরদের মাফ করে দেন— এসব এ প্রবন্ধে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে কেবল মুহম্মদ (স)এর মৃত্যর পর অশান্ত জনতাকে আবুবকর (রা) কীভাবে আল্লাহর বাণী শুনিয়ে শান্ত করেছেন সে কথাই উঠে এসেছে।
- উদ্দীপক ও ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধের তুলনায় দেখা যায়, উদ্দীপকে যে কয়টি বিষয়ের অবতারণা হয়েছে তা প্রবন্ধের খণ্ডাংশ মাত্র। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ভাবার্থে মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে মূলভাব প্রতিফলিত হয়নি।
মানুষ মুহাম্মদ (সঃ) সৃজনশীল প্রশ্ন ০২
সন্ত্যিকার মানব - কল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনারই ফসল। বাংলাদেশের মহৎ প্রতিভারা সবাই মানবিক চিন্তা আর আদর্শের উত্তরাধিকার রেখে। হেশ। দুঃখের বিষয়, সে উত্তরাধিকারকে আমরা জীবনে প্রয়ােগ করতে পারিনি। বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস থেকে লালন প্রমখ কবি এবং বুনককালে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল সবাইতাে মানবিক চেতনার উদাত্ত কণ্ঠস্বর । বঙ্কিমচন্দ্রের অবিস্মরণীয় সাহিত্যিক উক্তি : “তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?” এক গভীর মূল্যবােধেরই উৎসারণ।
ক. অমর, অবিনশ্বর কে?
খ. কোন বিষয়টি হযরতের চরিত্রকে মধুময় করে তুলেছিল এবং কীভাবে?
গ. উদ্দীপকে মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে প্রতিফলিত হযরত মুহম্মদ (স.)-এর কোন বৈশিষ্ট্যটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মিল থাকলেও উদ্দীপকের মূলভাব এবং মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধের মূলভাব এক নয়।”- মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ কর।
মানুষ মুহাম্মদ (সঃ) সৃজনশীল উত্তর ০২
ক.
অমর, অবিনশ্বর হচ্ছেন মহান আল্লাহ।
খ.
- সত্যের নিবিড় সাধনায় মহানবি হযরতের চরিত্রকে মধুময় করে তুলেছিল।
- তিনি সবসময় সত্যের পথে ছিলেন। সত্য প্রচার করতে গিয়ে তিনি বারবার শত্রু কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সত্য প্রচারে পিছু হটে যাননি। সত্যে তিনি ছিলেন বজ্রের মতাে কঠিন। তাঁর সততার জন্য শত্রুরাও তাঁকে আল-আমিন বিশ্বাসী বলে ডাকত। এভাবে সততার ফলে তার চরিত্র মধুময় হয়ে উঠেছিল।
গ.
- উদ্দীপকে 'মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে প্রতিফলিত হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মহৎ চিন্তাভাবনা ও মানবকল্যাণমূলক কাজের বৈশিষ্ট্যটি ফুটে উঠেছে।
- জগতে কালে কালে মহাপুরুষরা তাদের মানবীয় গুণাবলি দ্বারা মানুষকে আকষ্ট করেছেন। তাঁরা নিজেদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভুলে গিয়ে মানবকল্যাণে আত্মনিয়ােগ করেছেন। তাদের আত্ম উৎসর্গকারী অসাধারণ যােগ্যতা, বুদ্ধি, বিচারশক্তি সাধারণ মানুষকে বিস্মিত করেছে। তারা ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের উপাসক।
- উদ্দীপকে মহৎ প্রতিভাবান ব্যক্তিদের মানবিক চিন্তা এবং তা অনুসরণ করে মানবকল্যাণ সাধনের কথা বলা হয়েছে। এখানে। অপেক্ষাকৃত আধুনিককালে শ্রেষ্ঠ কবি-সাহিত্যিকরা কীভাবে মানুষের মধ্যে মূল্যবােধের উৎসারণ ও জাগরণ ঘটাতে চেয়েছেন তা তুলে ধরা হয়েছে। তারা উত্তম আদর্শ অনুসরণ করে মানবকল্যাণে আত্মনিয়ােগের জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। মানবকল্যাণে আত্মনিয়ােগের এই বিষয়টি মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে প্রতিফলিত হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মহৎ চিন্তাভাবনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কারণ তিনি অন্যায়ের পথ পরিহার করে সত্য ও ন্যায়ের পথে মানুষকে এগিয়ে এসে উত্তম ও মানবীয় গুণের অধিকারী হতে বলেছেন। মানুষকে উত্তম আদর্শের অধিকারী হওয়ার তার সেই আহ্বান মানবকল্যাণ সাধনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
ঘ.
- “মিল থাকলেও উদ্দীপকের মূলভাব এবং মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধের মূলভাব এক নয়।”- মন্তব্যটি যথার্থ ।
- মানুষ সষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। কর্মের মাধ্যমেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায়। মানুষ মানুষের সেবায় আত্মনিয়ােগ করে জীবনের সার্থকতা লাভ। করে। এর জন্য মানুষকে সততা, সহনশীলতা, ক্ষমাশীলতা প্রভৃতি মানবিক গুণের অধিকারী হতে হয়। এসব গুণ মানুষকে মহৎ করে তােলে ।
- মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মানবীয় গুণাবলির প্রকাশ ঘটেছে। ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে তিনি অসীম ধৈর্যের পরিচয়। ডিসচন এবং মানুষ তার প্রতি যে অন্যায় করেছে তা ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি নিজে অজস্র নির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন্তু তিনি কখনাে কাউকে আড়াল করেননি। অর্থাৎ অন্যায়কারীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তিনি অন্যায় করেননি। তার এই মানসিকতার সঙ্গে উদ্দীপকের তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?'-এর সাদৃশ্য রয়েছে। মহাজ্ঞানী-মহাজনরাও উত্তম আচরণ করার কথা বলেছেন। সুন্দর ও আদর্শবান মানুষ কখনাে অন্যায়। নক কষ্ট দেন না। এ বিষয়টি ছাড়াও আলােচ্য প্রবন্ধে মহানবি (স.)-এর আরও মানবীয় গুণাবলি ও আদর্শ তুলে ধরা হয়েছে।
- 'মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে মহম্মদ (স.)-এর মানবপ্রেম, সত্যনিষ্ঠা, দয়া, পরােপকারিতা, দূরদর্শিতা এবং আল্লাহর প্রতি গভীর ও দৃঢ়। এসব বিষয় ও ভাব উদ্দীপকে পূর্ণ রূপে প্রতিফলিত হয়নি। মহানবি (স.) মক্কার পৌত্তলিকদের ক্ষমা, আলাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েও ধৈর্য ধারণ করা প্রভৃতি বিষয় এ প্রবন্ধে প্রতিফলিত হয়েছে যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ । """"" . উদ্দীপকে মানবীয় গুণাবলি অর্জন ও মানবকল্যাণে আত্মনিয়ােগের কথা বলা হয়েছে। আলােচ্য প্রবন্ধে মহানবি (স.)-এর ধর্ম। ব দেওয়া এবং সব রকম সমস্যায় ধৈর্যধারণের দিকটি ফুটে উঠেছে যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।